• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

বাণিজ্য

কুষ্টিয়ায় তিন ঘণ্টায় প্রায় ৪ কোটি টাকার কেনাবেচা!

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৭ মে ২০২৩

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি, আকরামুজামান আরিফ:
কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার ঐতিহ্যবাহী শেরকান্দি কাপুড়িয়া হাটে মাত্র তিন ঘণ্টায় প্রায় ৪ কোটি টাকার গ্রে লুঙ্গি (প্রোসেসিংয়ের আগ পর্যন্ত লুঙ্গি) কেনাবেচার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (৬ মে) সকাল ৬ টা থেকে সকাল ৯ টা পর্যন্ত এ লেনদেন করেন তাঁতি, মধ্যস্তকারী ফঁড়িদার ও ব্যবসায়ীরা। এদিনে হাটে প্রায় দুই লক্ষ পিচ লুঙ্গি সাড়ে ৪ কোটি টাকায় লেনদেন করেন তাঁরা। এতথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই কাপুড়িয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ রানা। তিনি বলেন, সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে হাটে। আজকের হাটে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে করোনার আগে এলেনদেন ছিলো আরো কয়েকগুন বেশি। জানা গেছে, প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে গড়াই নদের কূল ঘেষে ১৮৬৯ সালে গড়ে ওঠে কুমারখালী পৌরসভা। তখন থেকেই শেরকান্দি এলাকায় শুরু হয়েছিল হাটের যাত্রা। কুমারখালীর অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তিই হচ্ছে বয়নশিল্প। এটি মূলত তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এহাটের অধিকাংশ মানুষই কুমারখালী ও খোকসা এলাকার। স্থায়ানীয় মানুষই এখানে বেশি। তবে অনেক দূর দূরান্ত থেকেও লোক আসে এখানে ব্যবসা করে। তাছাড়া ক্রেতারাও আসে দূর দূরান্ত থেকে। তাদের ভিড়ও বেশ। নিজেদের পছন্দ মতো এবং চাহিদা অনুযায়ী তারা কেনা কাটা করতে পারে। আবার পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার খুব সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এ হাট। প্রতি হাটে কোটি কোটি টাকার গ্রে লুঙ্গির ব্যবসা হয়। আরো জানা গেছে, করোনার সময় লকডাউনে বাসসহ অন্যযানবহন বন্ধ ছিল। সেসময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হাটের ঐহিত্য হারিয়েছে। ট্রেনে যোগাযোগ ও পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা থাকায় এখন জেলার পোড়াদহতে জমজমাট হাট লাগে। করোনার আগে শেরকান্দিতে প্রতি হাটে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকার কেনাবেচা হতো। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কাপুড়িয়া হাটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গ্রে লুঙ্গি কেনাবেচার জন্য টিনশেডের একটি পাকা ঘর নির্মাণ করা রয়েছে। সেখান হাজার হাজার তাঁতি, ফুঁড়িদার (মধ্যস্তকারী), হকার, ব্যবসায়ী,দর্শনার্থীদের আনাগোনা,পা ফেলার জায়গা নেই। কেউ লুঙ্গি সাজিয়ে বসেছে বিক্রির জন্য। কেউ বা কিনছেন। এছাড়াও টিনশেড ঘরের চারিদিকে ছোট ছোট ঘর রয়েছে। সেখানেও চলছে কেনাবেচা। ভ্যাঁপসা গরম, তবুও যেন দম ফেলানোর সময় নেই তাঁদের। এদিন হাটে মান ও আকার ভেদে প্রতি থান লুঙ্গি ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বেঁচাকেনা হয়। এক থান সমান ৪ পিচ লুঙ্গি। এসময় কথা হয় তাঁতি মো. মোক্তার হোসেনের (৩৫) সাথে। তিনি কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, গ্রামে তাঁর প্রায় ২০০ খানা আধুনিক তাঁত (পাওয়ারলোম) রয়েছে। শনিবার তিনি এক হাজার ৬০ টাকা দরে এক হাজার ৫০০ থান লুঙ্গি ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তাঁর ভাষ্য, তিনিই এখন ওই হাটের বড় তাঁতি। প্রতিহাটে তিনি ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকার গ্রে লুঙ্গি বিক্রি করেন। আর প্রতিহাটে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা লুঙ্গি কেনা বেচা হয়। আরেক তাঁতি তাঁর চাচাতো ভাই রুহুল আমিন জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এহাটে আসেন। তিনি শনিবারের হাটে এক হাজার থান লুঙ্গি বিভিন্ন দরে প্রায় দশ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তাঁর ভাষ্য, করোনার আগে বেচাবিক্রি আরো বেশি হতো। এদিন হাটে আসা ঘাঁসখাল এলাকার মাঝারি তাঁতি এনামুল হক বলেন, আকার ও মান ভেদে ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা করে প্রতি থান লুঙ্গি বিক্রি হয়েছে। তিনি শনিবারের হাটে ৬০০ থান লুঙ্গি বিক্রি করেছেন। চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা গ্রাম থেকে হাটে আসা ছোট আকারের তাঁতি আব্দুল লতিফ বলেন, চাল, ডাল, তেল, রং - সূতার দাম বেড়েছে অনেকগুন। কিন্তু সেই তুলনায় লুঙ্গির দাম বাড়েনি। তিনি ৮০০ টাকা দরে ৫০ থান লুঙ্গি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
মিল্টন হোসেন নামের একজন লুঙ্গি বিক্রেতা বলেন, তিনি পাবনার শাহাজাতপুর এলাকা থেকে লুঙ্গি কিনে এনে কুমারখালী হাটে বিক্রি করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে হকাররা হাটে এসে তাঁর কাছ থেকে লুঙ্গি কিনে নিয়ে যান। এহাটে তিনি এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকার বেঁচাকেনা করেছেন।
ফুঁড়িদার রাজু আহমেদ বলেন, হাটে বাইরের জেলা থেকে আগত পার্টিদের ( ব্যবসায়ী) মাল কিনে দেন তিনি। প্রতিহাটে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মাল কিনে দেন তিনি। তবে ঈদের পরে লুঙ্গির দাম উঠানামা করায় তিনি এহাটে কোনো পার্টি পাননি, মালও কিনেননি।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী রায়হান উদ্দিন বলেন, ৭২০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত দরে তিনি এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাল কিনেছেন। লিমন শেখ নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি বিভিন্ন দরে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকার লুঙ্গি কিনেছেন। এসএ পরিবহনে করে তিনি মাল নিয়ে যান বিক্রয় স্থলে।
কুমারখালী তাঁতবোর্ডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মেহেদী হাসান বলেন, উপজেলায় প্রায় সাত হাজার তাঁতি রয়েছে। প্রতি হাটে প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার বেঁচাকেনা হয়। কিন্তু করোনার আগে লেনদেন আরো বেশি ছিল। তবে আবারও ভাল ব্যবসা শুরু হয়েছে। তাঁতিদের ভাগ্যবদলে কাজ করছে তাঁতবোর্ড।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads